শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩

নেফ্রন (Nephron)

 সংজ্ঞা : বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একককে নেফ্রন বলে।

গঠনঃ প্রতিটি নেফ্রন প্রায় 5 সেন্টিমিটার বিশিষ্ট লম্বা এক নালিকা। নালিকার অংশ বিশেষের জটীলতা অনুযায়ী নেফ্রন প্রধানতঃ দুটো অংশে চিহ্নিত 1. ম্যালপিজিয়ান কণিকা (Malpighian Corpuscle) ও 2. বৃক্কিয় নালী (Renal Tubule)।


 (1) ম্যালপিজিয়ান কণিকা : 

সংজ্ঞা : নেফ্রনের গোলাকার স্ফীত প্রান্তটিকে ম্যালপিজিয়ান কণিকা বলে। প্রতিটি ম্যালপিজিয়ান কণিকা আবার দুটি অংশে যথা - (A) বাউম্যানস ক্যাপসুল (Bowman's Capsule) ও  (B) গ্লোমেরুলাস (Glomerulus)।

(A) বাউম্যানস ক্যাপসুল : সংজ্ঞা : ম্যালপিজিয়ান কণিকার পেয়ালাকৃতি বন্ধ অংশকে বাউম্যানস ক্যাপসুল বলে।


গঠন: (i) পেয়ালাকৃতি, অগ্রপ্রান্ত গহ্বর স্থিত গ্লোমেরুলাসকে বেষ্টন করে থাকে। (ii) দ্বি-প্রাচীরস্তর বিশিষ্ট, ভিসেরাল স্তরটি গ্লোমেরুলাসের সংস্পর্শে থাকে, প্যারাইটাল ভরটি বৃক্কীয় নালিকার সঙ্গে যুক্ত। (iii) প্রাচীর স্তর দুটির মাঝে ক্যাপসুল বিবর অবস্থিত। কাজ : গ্লোমেরুলাসকে ধারণ করে গ্লোমেরুলাসের পরিশ্রুত তরলকে সংগৃহীত করে।


(B) গ্লোমেরুলাস : সংজ্ঞা : বাউম্যানস ক্যাপসুল গহ্বরে অবস্থিত রক্তজালিকার


কুণ্ডলীকে গ্লোমেরুলাস বলে।


গঠন : (i) বৃক্কীয় ধমনী থেকে আসা অন্তর্মুখী বৃক্কীয় উপধমনী বাউম্যানস ক্যাপসুলের মধ্যে প্রচুর রক্ত জালিকা সৃষ্টির মাধ্যমে গ্লোমেরুলাসের অস্তিত্ব প্রদান করেছে। (ii) রক্ত নালিকাগুলি পুনরায় মিলিত হয়ে বহির্মুখী বৃক্কীয় উপধর্মনী সৃষ্টি করেছে। (iii) বহির্মুখী উপধমনী দীর্ঘ কিন্তু সরু, অন্তর্মুখী উপধমনী হ্রস্ব কিন্তু প্রশস্ত ব্যাস যুক্ত। (iv) গ্লোমেরুলাসের রক্তজালকের রক্ত চাপ অন্যান্য স্থানের রক্তজালকের রক্ত চাপ অপেক্ষা বেশি। (v) গ্লোমেরুলাসের রক্তজালিকার আন্ত:আবরণীস্তর, বেসমেন্ট ঝিল্লি ও বাউম্যানস ক্যাপসুলের অন্তঃস্থ কোশস্তরের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে বৃক্কের পরিস্রাবণ ঝিল্লি।

কাজ: অতি সূক্ষ্ম পরিশ্রুত যন্ত্র হিসেবে রক্ত থেকে রেচন পদার্থগুলোকে পরিস্রাবণ করা।


(2) বৃক্কীয় নালী : 

সংজ্ঞা : নেফ্রনের ম্যালপিজিয়ান করপাসল-এর তলদেশ থেকে উৎপন্ন হয়ে যে সূক্ষ্ম, পেঁচ্যানো বা কুণ্ডলীকৃত নালী সংগ্রাহী নালী পর্যন্ত বিস্তৃত তাকে বৃক্কীয় নালী বলে। বাউম্যানস ক্যাপসুল থেকে আসা বহির্মুখী বৃক্কীয় উপধমনীর সৃষ্ট পরিনালিকা – রক্ত-জালকে বৃক্কীয়নালী আবদ্ধ থাকে। প্রতিটি বৃক্কীয় নালী আবার নিম্নলিখিত তিনটি অংশে বিভক্ত – 

(i) নিকটবর্তী সংবর্ত বা পরাসংবর্ত নালিকা: ম্যালপিজিয়ান করপাসল-এর তলদেশ থেকে প্রায় 14 মিলিমিটার দীর্ঘ, 0.5 মিলিমিটার ব্যাস যুক্ত জটীল কুণ্ডলীকৃত অংশকে নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকা বলে।

কাজ : বাউম্যানস ক্যাপসুলের পরিস্রুত তরল থেকে দেহের পক্ষে প্রয়োজনীয় বস্তু যথা—সোডিয়াম, গ্লুকোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ক্রিয়াটিন, সালফেট প্রভৃতির পুনঃবিশোষণ করে রক্তে ফিরিয়ে দেওয়া।

(ii) হেনলীর লুপ: নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকার শেষ প্রান্ত সোজা হয়ে বৃক্কের অন্তঃস্তরে প্রবেশ করে ইংরাজী 'U' অক্ষরের ন্যায় নালিকার যে অংশ গঠন করে তাকে হেনলীর লুপ বলে। 

কাজ: নালিকাস্থিত তরল থেকে জল, ক্লোরাইড ও সোডিয়াম বিশোষণ ।


(iii) দূরবর্তী সংবর্ত বা দূরসংবর্ত নালিকা : হেনলী লুপের পরবর্তী প্রায় 5 মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও 22-50 মাইক্রন ব্যাস সম্পন্ন কুণ্ডলীকৃত নালিকাকে দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা বলে। অন্তর্মুখী উপধমনীর মাধ্যমে এই নালিকার ম্যাকুলা ডেনসা এবং জাকস্টা গ্লোমেরুলার কোশ গঠিত হয়ে লসিকা কোশের সমন্বয়ে জাকস্টা গ্লোমেরুলার অ্যাপারেটাস তৈরি হয়।

কাজ : ADH হরমোনের উপস্থিতিতে জলের বিশোষণ ঘটিয়ে একটি অতিসার তরল তথা মূত্র তৈরি করা।

সংগ্রাহক নালিকা: দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা যে স্থূল নালিকায় যুক্ত হয়, তাকে সংগ্রাহক নালিকা বলে। অনেকগুলি সংগ্রাহক নালিকা একত্রিত হয়ে বেলিনীর নালী সৃষ্টি করেছে। 

কাজ: মূত্রকে গবিনীর মাধ্যমে মূত্র থলিতে চালিত করা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নেফ্রন (Nephron)

 সংজ্ঞা : বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একককে নেফ্রন বলে। গঠনঃ প্রতিটি নেফ্রন প্রায় 5 সেন্টিমিটার বিশিষ্ট লম্বা এক নালিকা। নালিকার অংশ বিশেষের জট...